প্রিয় ঈশ্বরী,
কেমন আছো ? ভালো তোÑ?আমি তোমার ভাষায় আমার ‘দুর্বিনীত স্বভাব ’আর ‘ঔদ্ধত্ব’নিয়ে বেশ আছি ,যেভাবে মফস্বলের তরুন কবিরা থাকে । রাত জেগে কবিতা লেখা ,কখনো বির্তক উৎসব ,কখনো রবীন্দ্র সন্ধ্যা অথবা আবার কখনো আবৃত্তি উৎসবের বিরামহীন আয়োজনে ব্যস্ত থাকা । এই তো । এভাবেই কাটে মফস্বলের একঘেঁয়ে বোহেমিয়ান কবিয়াল জীবন । তবুও বেঁচে থাকা এই নাগরিক নির্জনতায় ব্যস্ততায় Ñবিষণœতায় ।
অনেক অনেক দিন পর লিখছি তোমাকে ।সম্ভবতঃ শেষ চিঠি । এই চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছাবে তখন অনেক দূরে আমি ,সাত সমুদ্দুর আর তের নদী পেরিয়ে Ñ্। কারণ আগামী কালই আমার ফ্লাইট ,ঠিক বেলা ২টায়,ঢাকা থেকে নিউইর্য়ক হয়ে প্যারিস । হ্যাঁ ,এক্কেবারে । শিল্প সাহিত্য আর ভালোবাসার শহর প্যারিসই সম্ভবতঃআমার বোহেমিয়ান জীবনের স্থিতি এনে দিবে। অবাক হলে ? বেশ? নাকি কিছুটা ? যে তুমি কাছে অনিশ্চিত গন্তব্যে আমার মন খারাপ হবে কিনা আজ আর তা বড় বেশী ভাবায় না ,কিংবা পোড়ায়ও না।তবুও কথা থেকে যায় ,অবেলায় নীল জোৎস্নায় প্রথম ডেকেছিল যে মেঘ সে তো তুমিই ছিলে , তুমিই তো ছিলে আমার অনন্ত নক্ষত্র নারী । মনে আছে মেয়ে , সেই ২৩সেপ্টেম্বর ০২সালে তোমার হাত ছুঁয়ে অণির্বাণ শপথে বলেছিলাম যদি তোমাকে হারাই কোনদিন তবে আর থাকবনা এদেশ,এ মাটি, আর এ শহরের স্পর্শে।দূর সুদূরে হারিয়ে যাবো ,পালিয়ে যাবে ,তাই যাচ্ছি। মাঝখানের অনেক কথা ভাঙার কথামালায় ,কী আশ্চর্য ! আজো সেই দুপুরের নীল নির্জনতায় তোমাদের কলেজের কমনরুমের লাগোয়া রুমট্য়া দেয়া সেই কথাটাই কেবল শেষ পর্যন্ত রয়ে গেল । বাকী সÑব ? হাঃ হাঃ হাঃ ।সÑমÑয় ।মানুষ মরে গেলে পচে যায় ,বেচেঁ থাকলে বদলায়।
এখন অনেক রাত । ক’টা বাজে জানো ?২টা ২৭ মিনিট ।তুমি খুলেছ নতুন জীবনের হালখাতা ।আর আমার হিসেবের খাতা নিরন্তর শূন্য এখনো । তুমি হয়তবা অঘোর ঘুমে মিঃ বর্গীর বুকে মাথা রেখে কিংবা জেগে আছো প্রথাবিরোধী নিয়মে ।আচ্ছা ,এক বুক থেকে অন্য বুকে ট্রান্সফার হলে শরীরের সোদা গন্ধ-মাথা রাখার ভঙ্গী, শাটের বোতাম নিয়ে খেলা করার অভ্যাস ও কি বদলায় ?তোমার এসব অভ্যাসগুলি এখনো আছে?নাকি নতুন জীবনের নবপাঠ বদরে দেয় নিজস্ব নিয়ম ,পুরনো হৃদয়ের অজস্র পুরাকীর্তি ,ঐতিহ্যস্মৃতি? তুমি ও কি বদলেছ ? আমি একদম বদলাইনি । তখন যেমন ছিলাম ,এখন ও তেমন আছি । মাঝখানের বহতা সময় বড্ড ধুলো ফেলেছে সম্পকের উপর ,স্মৃতির উপর , জীবনের উপর।তবু মন খারাপ হওয়া কোন কোন বিকেলে অথবা বৃষ্টিঝরা বিষণœ কোন রাতে হৃদয়ের পলেস্তারা খসে গেলে বুকটা আকু পাকু করে ৃউঠে কোন সে বেদনায় -, সারা রাতআর ঘুম আসে না । কেউ জানেনা কেন রাত জাগা নিঃসঙ্গতায় একাকী নীল জ্যোৎস্নায় রাজপথে হেটে বেড়ায় এক অভিমানী যুবক ।বুকের ভেতর এক জীবন্ত ফুজিয়ামা নিয়ে বেঁচে াকা যুবকের আর সারারাত ঘরে ফেরা হয় না । নির্ভাজ বিছানায় লুটোপুটি খায় পূণিমা রাতের প্রেমজ জ্যোসনা । কতরাত ঘুমিয়েছি কেদে কেদে জানেনা আকাশের অনন্ত নক্ষত্রবীি ছাড়া ।
তুমি একদিন আমার জন্য কেদেঁছিলে আমি তাই
বর্ষণ দেখেই বুঝি মেঘের রহস্য ভালোবাসা । আমি
তাই বর্ষণ রাত্রির শেষ মেঘের শব্দের দিকে আজো
কান পেতে থাকি ।
কোনো কোনো বর্ষণের ভারাক্রান্ত রাতে
বুকের ভেতর কোনখানে এক ব্যাথা বোধ করি মনে হয়
আমÍ অস্তিত্ব বুঝি লুপ্ত হবে মেঘে ,মেঘের ধারায়
আমি কেঁপে উঠি,কেঁদে উঠি ।
মনে আছে একবার বন্ধুদের সাথে চ্যালেঞ্জে সিগারেট খেয়েছিলাম । তোমার সে কি রাগ ?আমার মুখে সিগারেটের গন্ধ শুনে সে কি কান্না তোমার ! তোমার স্বামীতো চেইন স্মোকার, শুনেছি প্রায়শঃই ড্রিংকও করে । তবে কি এখন তোমার গন্ধ অনূভূতি নষ্ট হয়ে গেছে ? নাকি অন্য অনেক কিছুর মত গন্ধটাও সয়ে গেছ?আচ্ছা এখনও কি গান শোনো তুমি? সেই যে তোমার প্রিয় গায়ক বাপ্পা সঞ্জীব। দলছুট্ এর নতুন গান শুনলে উন্মনা হয়ে উঠতে তুমি ।এই শোনো সঞ্জীবের একটা নতুন ক্যাসেট বেরিয়েছে ।কি নাম জানো? স্বপ্নবাজি। কি সব অদ্ভুত কষ্ট জাগানিয়া লিরিক আর সুরÑ চোখটা এত পোড়ায় কেন ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও, সমুদ্র কি তোমার ছেলে আদর দিয়ে চোখে মাখাও, আমি তোমার কান্না উড়াই , কান্না কুড়াই, কান্না আমি পান করে যাই ……..।
প্রিয় প্রেম আমার ,২৭ সেপ্টেম্বর ….সাল। মনে আছে তোমার ?কি হয়েছিলো সেদিন তোমার? কেন এত সহজে ভেঙ্গে দিলে খেলাঘর ?আজো আমি জানি না। আর জানি না বলেই পাইনি বহু অমীমাংসিত প্রশ্নের উওর। আজো মাঝে মাঝে জানতে বড় সাধ হয় কেন অবেলায় আমার বুকের পাঁজর এক কঠিন কঠিনতর দুরারোগ্য ব্যাধি সংক্রমিত করলে তুমি ? কেন খেলার ছলেই এলোমেলো করে দিলে এক জীবনের মানচিএ ?
যে তোমাকে ভেবে ভেবে আমি বেড়ে উঠেছে জীবনের সুদীর্ঘ সময় সেই আমিই আজ কত নিরুওাপ , বোধহীন অথচ তুমি আমাকে কত নিরুওাপ , বোধহীন অথচ তুমি আমাকে দিয়েছিলে জীবনের সকল সম্ভাবনার পাঠ ।ভালবাসায় ভিজে ভিজে আমিও স্নিগ্ধ অমরাবতীর মতো মেনে নিয়েছি তোমার সকল ভালবাসাময় অনুযোগ আর অভিযোগের ফুলঝুরি । অথচ নিয়তি আর সময়ের কতো নোংরা আর কদর্য কৃতদাস আমরা ।এভাবেই একদিন প্রিয় ভালবাসা মরে যায়-পচেঁযায় – ক্ষয়ে যায়, পেছনে পড়ে থাকে কিছু প্রিয় স্মৃতি আর একবুক দীর্ঘশ্বাস।
মেঘবালিকা ,এ অবেলায় তোমার প্রতি আর কোনো অনুযোগ নেই আমার। আমি আমাকেই সবচেয়ে বড় অপরাধী মানি। আর মানি বলেই তোমার সামনে কৈফিয়ত চাইতেও দাঁড়াইনি।এ যে আমায় মানায় না ।যেবার তোমার জন্মদিনে ১০৮টি গোলাপ ছড়িয়ে দিয়েছিলাম সমস্ত আঙিনা জুড়ে সেসব গোলাপগুলোর মতো আমিও তোমার জীবন থেকে নীরবেই অভিমানী সজল চোকে বিদায় নিয়েছিলাম। তার অর্থ এই নয় তোমার প্রতি আমার ভালবাসা ফুরিয়ে গেছে ,ঝুড়িয়ে গেছে ।ভালবাসা আজো তোমার প্রতি বেঁচে আছে , শুদ্ধ এবং পবিএতর অনাবিল বিশ্বাসে।
অনেক না পাওয়া ,অনেক নিরুওর প্রশ্নতরঙ্গ আর স্মার্ট মিথ্যাবাদীতা আরো অনেকের মতো আমাকে অবাক করেছে,হতাশ করেছে ,বেদনাহত করেছে,এই যা।আর কিচ্ছু নয় ।ভালবাসা তবুও বেঁচে আছে শীতঘুমে বেদনায়- দীর্ঘশ্বাসে ।
প্রিয় ঈশ্বরী, আজ এই সন্ধিক্ষনে দাড়িঁয়ে নিজের প্রতি অসম্ভব আতœবিশ্বাস আর সততা নিয়েই বলছি-শোন, হ্যাঁ এখনো আমার আমিটা জুড়ে বসবাস করে যে,সে তুমি। তোমাকে ভেবে ভেবেই আমার সকাল হয়, সন্ধ্যা হয়, রাত হয়,ভোরও। তবুও যে তুমি আমার ভেতর নিজস্ব স্বকীয়তা আর পরিপূর্ণতাই বেচেঁ আছো তার প্রতি আমার কোন ঘৃণা নেই, কারণ সেই তুমি আমার শুদ্ধতম ভোরের আকাশ ,প্রিয়তম নক্ষএ নারী ।আমার যত ঘৃণা সেই মিথ্যাবাদী মেয়েটির প্রতি যে ভুল প্রতিশ্র“তি দেয়, মিথ্যে অঙ্গিকার করে,পণ্যের মত বিক্রি করে হয় এবং ভুল ভালবাসার মোহে পড়ে বিষে নীল হয়, নীলাভ হয়,এরপর……একদিন সেই বাসন্তী এখন বিহারে, ডাকাত স্বামীর ছ’সন্তানের জননী হয়েছে…….’ নির্মলেন্দুগুণের কবিতা হয়ে যায়।
ভালো থেকো, সুখেও……..
ইতি
তোমার শ্রাবণ