কোলের সন্তান বিক্রি হয় হাজার টাকার, ১০টাকার জন্য খুন হয মানুষ, সামান্য ভূসম্পওির জন্য ভাই খুন করে ভাইকে,পুত্র-বাবাকে,নির্বাচনী রাজনীতির গণতান্ত্রিকতার ঢামাঢোলে মায়ের সামনে ধর্ষিতা হয় কিশোরী কন্যা পূর্ণিমা অথবা স্বামীকে বেঁধে রেখে সামনেই স্ত্রীকে……। জাতীয় দৈনিকসমূহে এরকম শিরোনাম ইদানীং এত বেশী সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে যে, আমরা দেখেও না দেখার ভান করি কিংবা নিজের ভিতর সামান্য সাময়িক আলোড়ণ তুললেও কেন এমন হয়-এমন জটিলতর প্রশ্নের সহজতর উওর খুঁজে বের করার সময় অথবা ইচ্ছা খুব কম সময়ই জাগে। অথবা বুমেরাং হয়ে যায় , কেননা কেঁচো খুড়তে সাপ বের হওয়ার মত আমরাও জেনে যাই অনভিপ্রেতভাবে আড়ালের অনেক ইতিহাস ।সুতরাং কৌতুহল না দেখিয়ে, প্রশ্ন না করে নির্বিকার চেয়ে থাকা ঢের ভাল। ভেতরের ‘আমিকে’ ঘুম পাড়ানোর জন্য চার দেয়ালের ভেতরেই আছে নানা আয়োজন, দূরদর্শনে স্যাটেলাইটের বাহারী আয়োজন, গোল্ডলিফ অথবা বেনসন এন্ড হেজেজের ধোঁয়া একটু বেড়ে ……,ব্রান্দি, হুইস্কি,বিয়ার আর ঘুম ঘুম চোখে মাধুরী, ঐশ্বরিয়া, শিল্পা অথবা ব্রিটনি, জেনিফার লোপেজ-এর উন্মুক্ত নাভিমূলের নগ্ন সৌন্দর্য দর্শনের পিল খাইয়ে তৃতীয় বিশ্বের তরুণের প্রতিভাকে ড্রয়িংরুমেই হত্যা করার নানা পুঁজিবাদী আয়োজন এখন ওপেন সিক্রেট। সকালবেলা চায়ের সঙ্গে মিডিয়া মুঘলদের মালিকাধীন তাবেদারী দৈনিক আর স্যাটেলাইটের মিশেল একসাথে গিলে আমরা ক্যারিয়ারে চেপে বসি। কেউ কেউ টেবিলে মা-বাবার বাধ্য ছেলের মত আদাজল খেয়ে পড়াশুনায় মেতে উঠি, বা কেউ জলজ পরিবহন অথবা তৃণজ বৃক্ষের তকমা গাঁয়ে এঁটে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় হয়ে উঠি ছাত্র(! )নেতা নামক ঠিকাদার, টেন্ডারবাজ অথবা একটু অগ্রসর হয়ে ক্যাডার(যার অবশ্যম্ভাবী পরিনত মন্ত্রী অথবা এম.পি)।লক্ষ্য সবার একটাই একটি ফ্ল্যাট বাড়ি, একজন সুদর্শনা লক্ষী, ড্রইং রুমের দেয়ালে পাবলো পিকাসো- জয়নুল আবেদীন অথবা হাশেম খানদের ছবি, আর ব্যালকনিতে হাস্নাহেনা কিংবা বেলীর সঙ্গে এক টুকরো জোৎস্না আর রবি বাবুর শেষের কবিতা-এ রকম একটি স্বপ্নের স্কেচ করে আমরা নেমে পড়েছি জীবনের ম্যারাথনে ।যে কারণে মিডিয়ার পাতায় ছোট হরফে মানুষ বিক্রির সংবাদ ঢেকে দেয় তারকা জরিপের রড় হরফ ।বিজ্ঞাপনের আগুনে পুড়ে পাশের বাড়ীর বালিকারাও একদিন হয়ে যায় মিডিয়া পার্সোনালিটি-সেলিব্রেটি। গ্ল্যামার এখন আতœপরিচয়ের ভাষা ,ক্যারিয়ার মূল সুর ।সুতরাং ছোটো এবং ছোটো—।পায়ের তলে পিষ্ট করে দুমড়ে মুচড়ে চলে যাও ফুটপাতে পড়ে থাকা বস্ত্রহীন মায়ের কোলে আগামী প্রজন্ম,ডাস্টবিনের ময়লা খাবার গিলতে থাকা কোন বৃদ্ধাকে। আমরা কি অভিষ্ট লক্ষ্যে পেীছার ব্যস্ততায় প্রতিদিন খুন করছিনা আমাদের ভেতরের নিজস্ব মানুষটিকে ,সৃষ্টিশীলতাকে ,মানবিকতা ,মূল্যবোধ আর আতœপরিচয়কে ?
মুখস্ত বিদ্যায় আমরা বেশ দক্ষ যদিও সময়টাই এখন দক্ষতা প্রমাণের । রাজনীতির দাবা বোর্ডের প্রতিটি চাল হিসেব নিকেশ করে দিতে ষোলআনা দক্ষ হয়ে উঠেছি আমরা । এস আই হতে নিজস্ব বিদ্যার চেয়ে পেছনের বারান্দার বৈঠক যে বেশি জরুরি তা বেশ বুঝতে পারি বলেই বেশ দক্ষতার সাথেই তার প্রয়োগ ঘটাই আমরা । বিসিএসে কোন রকমে লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারলেই হলো, তারপর …..।হাঃ হাঃ হাঃ ,ক্ষমা করো জটিলেশ্বর ,জীবনটা এতই সোজা – সরল–। পুঁথিগত বিদ্যার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বির্তক ,সমাধান মেলেনা । এমনি ভাবেই মেলেনা জীবনের বহু প্রশ্নের উত্তর । তবুও ছুটতে হয় মস্তিঙ্কের থরে থরে সাজানো কৃত্রিম স্বপ্নের পেছনে । ছুটতে ছুটতেই তো নিজেকে হারাই । হারাই আপন ঘর ,গোরস্থালি, স্বজন ।অন্তরের কোন এক গহীনে চলে কান্নার সুর ।
তবুও বেগের সাথে আবেগের মত কোন এক গহীন গোপন টানে তারুণ্য ছুটে যায় লালনের আখড়ায়। হেভি মেটালিক মুর্চ্ছণার ভীড়েও সে খোঁজে বাউলিয়ানার কোমল লিরিক । খোঁজে জীবনানন্দ,খোঁজে ইকো ফ্রেন্ড,পত্রমিতা —।কি এক অজানা আতœবিশ্বাসে আজকের তারুণ্য পোলি ও দানবের হাত থেকে রক্ষা করে শিশু অমিতকে । পাশে দাঁড়ায় এসিডদগ্ধ বিপন্ন নারীর । হাজার হাজার খাকি জলপাই রঙের পুতুলকে উপেক্ষা করে মুর্দাবাদ দেয় আঙ্কেল স্যামের । যদিও কখনো কখনো বিপদগামী হয় তারুণ্য নিজস্ব বলয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ,রাষ্ট্রের দায়ও কম নয় । অপ্রাপ্তি— — হতাশা — সেশনজট– বেকারত্ব— আরও কত কি ? তারুণ্যের পদস্খলন কি তবে স্বাভাবিক নয়?
গেল শরতে চাঁদ আর শিশিরের ভালোবাসায় ভিজে ঘাস বুকে মুক্তো ধরেছিল ।পরিবর্তিত প্রেক্ষিতে তার বুকে এখন শাইনপুকুর হোল্ডিংস ,যমুনা মডেল টাউন ,বসুন্ধরা আবাসিক —-। মাঠ প্রান্তর দাবড়ে বেড়ানো বুনো চাঁদ এখন ঠাঁই নিয়েছে জানালার শার্সি,ব্যালকনির আড়ালে। চাঁদের বুড়িকে ভূলে গেছে বিগত তারুণ্য ,নতুনরা চিনেই না ,ভবিষ্যতে —-। াক ওসব ।সামনের পূর্ণিমায় আমরাই না হয় রাত জেগে পাহারা দেব অভিমানী চাঁদের লুকানো সৌন্দর্যকে ।ক্ষুদ্রকায় উৎপাদনের একক কোষগুলো ভেঙে বহুকোষী মাল্টিন্যাশনাল ত্রাস ,বহুজাতিক কোম্পীর শাসন শোষন ,বর্জ্যরে বিশ্বায়ন ,তথাকথিত সাইবার যুদ্ধ ,শেভরণ,শেল, অক্সিডেন্টাল- সব ভূলে অন্ততঃ একটি রাত,একটি ভরা পূর্ণিমা ,নিজস্ব নিঃস্বঙ্গত্ায় আমি ভূলে যেতে চাই ভেতরের ‘আমি’টি ক্রমশঃ মরে যাচ্ছি,শিথিল হচ্ছি ,হারিয়ে যাচ্ছি…..
তবুও আকাশ পোড়েনা চাঁদ কিংবা তারার আগুনে শুধু আমরাই নিজস্ব আগুনে পুড়ি সবুজ সাবেকি অভিমানে ,আগুণের কাছে গেলে নাকি সব পুড়ে ,কিন্তুু আমরা পুড়ি দূরের আগুনে –।তবুও কবিতা আমাদের পিছু ছাড়েনা ।
আগুনের একেবারে মাঝখানে
এসে দাঁড়ালে আর আগুন লাগে না, আগে
পাশে পাশে থাকত ,হাত পুড়ে যাবে
মুখ পুড়ে যাবে,বুক পুড়ে যাবে ,সর্বদা
ভয় ছিল
এখন এসে দাড়িয়েছি এক্কেবারে আগুণের
মাঝখানে
হাত পুড়ে যাচ্ছে ,এখন আর ভয় নেই ।
এখন ডানার প্রত্যেক পালকে আগুন
কিন্তু দারুণ অবাক হয়ে দেখছি
আমাকে পোড়াতে গিয়ে, এই প্রথম
আগুন নিজেও পুড়ছে ।
আগুনের কবিতা থাক ,থাক হারিয়ে যাবার অনিশ্চিত সম্ভাবনা ও।এই বৈশাখে আমরা ও ভূলে যাই বিগত বৈশাখের ব্যর্থতা ,এই বৈশাখে আমরা ক’জন তরুণ তুর্কি যে বেপরোয়া হয়ে উঠার সুযোগ পেয়েছি (সুযোগ নিয়েছি!)তাও বা কম কি ? আসছে বৈশাখে আর ও বেশি বেপরোয়া ,জেদী আর আতœপ্রত্যয়ী হয়ে উঠার সঞ্জীবনী মশলাতো এই বৈশাখেই রপ্ত করতে হবে । এইভাবে প্রতিটি বৈশাখে আমাদের জেদী তারুণ্যের মিছিল দীর্ঘ থেকে র্দীঘতর হবে, স্বপ্নের পরিধি বেড়ে যাবে ,মিঃ নো রা‘নো বডি’ হয়ে যাবে ,আর আমরা ‘আমরা’হয়েই উঠব ক্রমশঃ—–,সুনিশ্চিতভাবেই —- এবং এটাই রূঢ় কঠিন অথচ অনিবার্য বাস্তবতা। একে মেনে নেয়ার প্রত্যয় ও সাহস এখান থেকেই পুরাতনকে সঞ্চয় করতে হবে । নতুবা—-। মানুষের চৈতন্য কি তার সামাজিক অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল নয়? আমাদের সামাজিক অস্তিত্ব তবে আমাদের কোন চৈতন্য দিচ্ছে ?আমরা কি বুঝতে পারছি সকালের নিউজ পেপার আর ড্রইং রুমের বোকা বাক্সটি নিয়ন্ত্রন নিতে চলেছে আমাদের মনোজগতে ? এগিয়ে যাওয়া মানুষদের থামিয়ে দেয়ার মত সমস্ত আয়োজনই সমাপ্ত আজ। যে তথ্যগুলো গড়ে দেয় আমাদের সামাজিক ,রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তার নিয়ন্ত্রন কার হাতে ? ক্ষমতার কেন্দ্রে যাতায়াতকারী কিন্তু ু ভূলে যায় অতীত আর অতীতের দায় ।জনপদে চলে ত্রাসের আগুন ।কোন কোন আগুন নেভাতে হয় আগুন দিয়েই ।অভিজ্ঞতাকে প্রশ্ন করে তারুণ্যই জ্বালায় সে আগুন ।কিন্তু সে আগুনে মশাল জ্বালিয়ে হেঁটে যেতে হয় রক্তে,ঘামে ভেজা অনেকটা পথ।পথ যদি র্দীঘ হয় ,তবে এখনি সময় জানালাটা খোলার, আরেকটু ঋদ্ধ হও -ক্রান্তিকাল আসন্ন।