প্রিয়তমা আমার
এই চিঠিটি যখন লিখছি,তখন জ্বরে কাঁপছে পুরো শরীর আমার,দাঁড়ানোর সামান্যতম শক্তিও নেই শরীরে। তবুও বিধ্বস্ত বিপন্ন শরীরটা নিয়ে কেবল মনের জোরেই লিখতে বসা তোমাকে। জানিনা, কোন এক অদ্ভূত অশরীরি মানসিক শক্তি ভর করেছে আমার শরীরে,হয়তো ভালোবাসি বলেই। মা জানালো,কাল রাতে জ্বরের ঘোরে নাকি তোমার নামটাই বলেছি বারবার ! কি মায়া,কি ভালোবাসা, কি অবাক মুগ্ধতায় ভরা জীবন আমার !
প্রিয় ঈশ্বরী আমার
তুমি চাইছো,তোমাকে ভুলে থাকি। হুম,সেই চেষ্টাই করছি আমি এক সপ্তাহ ধরে। হয়তো পারছি,কিংবা পারছিনা,কিন্তু চেষ্টাটা ঠিক ঠিক করেই যাচ্ছি। শুধু তুমি ভালো থাকবে বলে, তুমি ভালো কাটাবে সময়,সুন্দর থাকতে চাও বলেই, আমি খুউব নীরবে দূরে সরে যাচ্ছি। কষ্ট হচ্ছে,তবুও চেষ্টার কোন ত্রুটি করছিনা। আমাকে যে পারতেই হবে,অন্তত: তোমার ভালো থাকার জন্য।
সুচিস্মিতা আমার
জানো,সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভুলে ফোনটা ঠিকই হাতে নেই নিয়ম করে‘শুভ সকাল’ জানাবো বলে ! কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই মেসেজটা লেখা হয়,কিংবা হয়না অথবা লিখেও পাঠানো হয়না ! রাতে যে কতবার ফোন হাতে নেই,মেসেজ পাঠাব বলে,হয়না তবুও… দীর্ঘদিনের অভ্যাস কি আর মুহুর্তেই বদলায় ! আমি জানি,জেনে গেছি,আমি শুভ সকাল না বললেও এখন তোমার প্রতিটি সকালই শুভ হয়,এখন তোমার শুভকামনা জানানোর স্বজনেরও অভাব নেই ! রাতের ঘুমটিও নিশ্চিত বেশ ভালোই হয়…
জান আমার
আমি জানিনা, কেউ এখন আর তোমাকে ‘জানু’ বলে ডাকে কিনা ! আমার শূণ্যস্থান দখল করে নিয়েছে কিনা অন্য কেউ। তবুও তোমার জন্য শুভকামনা বরাবরের মতোই। তুমি নিজের ভুবনে নিজের মতো করেই ভালো থাকতে চেয়েছো বলেই আমি দুরে সরে যাচ্ছি,দুরেই সরে থাকবো আমৃত্যু। কোনদিন পথ ভুলেও যেনো দেখা না হয় আমাদের । সেই আশীর্বাদই করো সৃষ্টিকর্তার কাছে। তোমাকে দেখলে যে ফের এলোমেলো হয়ে যাবো বোকা মানুষটা।
প্রিয়তমা দেবি
তুমিতো জানোই প্রচলিত পুরুষদের মতো নই আমি। সংগ্রাম করে করেই বেড়ে উঠেছি আমি,নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি প্রতিটি স্তরেই,পথচলার। আমার সমস্ত সংগ্রামে,লড়াইয়ের নেপথ্য নায়িকা তুমি,যে অফুরান অনুপ্রেরণায় আমাকে দিয়েছো সাহস আর সহানুভূতি। আমিও অন্য পুরুষের মতো তোমার শরীর নয়, তোমাকেই ভালোবেসে, তোমাতেই নিমগ্ন ছিলাম পুরোটা সময়। জীবনের কত কষ্ট, জয় পরাজয়ের গল্প, হেরে যাওয়া কিংবা জিতে যাওয়ার আকুলতা-উচ্ছাস উন্মুক্ত করেছি কেবল তোমার সামনেই। তুমিই ছিলে আমার সব গল্প শেয়ারের একমাত্র মানবী। কি আশ্চর্য্য, এখনো কত কথা আমার,কিন্তু শোনার কেউ নেই! আর কোনদিন কাউকে বলাও হবেনা হয়তো কত শত গল্প আমার । আহ্ কী আশ্চর্য্য জীবন !
প্রিয় সুদর্শনা
আমাদের সব স্বপ্নরা এখন গল্প হয়ে গেছে। হয়তো আর কোনদিন নির্জনতায় তোমায় ছোঁয়া হবেনা আমার। হয়তো কোনদিনই উন্মোচন করা হবেনা গভীর গোপন ভালোবাসায়। তুমিও দুরন্ত ঠোঁটের কাঁপনে ঝড় তুলবেনা আর আমার ঠোঁটে। সম্ভবত,আর কখনই আমার বুকে মাথা রাখবেনা তুমি,বিশ্বস্ততায়, ভালোবেসে। ভালোবাসারা মেঘ হয়ে দুর আকাশে উড়ে গেছে এখন। সবকিছুই এখন কেবলই স্মৃতি,দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার। তবুও আমার হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরতর প্রদেশ থেকেই চাওয়া,তুমি ভালো থেকো…. তোমার ভালো থাকাটা ভীষণ জরুরী….
প্রিয়তমা আমার
আমি যেভাবেই থাকি,বেঁচেই থাকবো। আমার জন্য কোন টেনশন করোনা। আমার বিশাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো খড়কূটো ঠিক পেয়ে যাব আমি। তুমি অতসব ভেবোনা আমায় নিয়ে। শুধুই একটাই অনুরোধ,যদি ঝড়ে যাই,অকালে,অনিয়মে কিংবা নিয়ম ভাঙ্গার ব্যাকরণে,তবে আমাকে দেখতে এসো…সবার সামনেই সাদা কাফনে মোড়া আমার মাথার চুলে হাতটা বুলিয়ে দিও…না, কেউ কিছু ভাববে না, সন্দেহ করবেনা, মৃত মানুষকে একটু সহানুভূতি একটু ভালোবাসা দিলে কেইবা খুঁনসুটি করবে আর ! তবুও শেষ বিদায়ের বেলায়,সামাজিকতার চোখকে ভ্রকুটি কাটার সাহস দেখিয়ে বলতে পারবে নিজ সন্তানকে, ‘এই ভালো মানুষটাই একদিন তোমার মাকে ভীষণ ভালোবাসতো,শুধুই তোমার মায়ের ভালো থাকার জন্যই বুকে পাথর চেপে দূরে সরে গিয়ে অদ্ভূদ এক বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে দিলো বোকা মানুষটা !’
আচ্ছা, তখন কি তোমার চোখের টলমল জল কান্না হয়ে নেমে আসবে অধরে ? আচ্ছা, তখন কি তোমার বুকটাতে হাহাকার করে উঠবে ? তুমি কি চিৎকার করে বলে উঠবে-‘ওরে বোকা,সত্যিই তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি,ভালোবাসতাম,ভালোবাসবই… ।’