এরপর তোমার সাথে আর কোন কথা থাকেনা। আমি আমার নিজস্বতার শব্দ বুনে বুনে একা একা গড়ি আরেক বেদনার-বিষাদের প্রাসাদ। আমার প্রাসাদে একা এই আমি কষ্ট বুনি,নীল কষ্ট ,লাল কষ্ট। সৃষ্টি করি শব্দের মায়াজাল। যন্ত্রণার পদ্য। আমাকে কোনদিন বোঝেনি কেউই। শেষতম নির্ভরতার মতো আমি যখন বারবার ফিরে যাই আমার প্রিয় তোমার কাছে কী নির্দ্বিধায় আমাকে জেনে নিতে হয় নিজের প্রয়োজনে,নিজের পুরনো প্রণয়,পুরনো স্মৃতি স্মৃতিভোলার প্রয়োজনেই তুমি ভালোবেসেছো আমায়। তোমার প্রশ্নবিদ্ধ ভালোবাসা আমাকে কষ্টে নীল করে,বিদ্ধ করে বেদনার তীর আমার কোমল হৃদয়ে । আমি কষ্ট পাই,রাত জেগে কাঁদি এবং জেনে যাই পৃথিবীতে কেউ কাউকে আসলেই ভালোবাসেনা। কিছু স্বার্থ তাদের কাছাকাছি এনে দেয় স্রেফ।স্বার্থের প্রয়োজনেই ভালোবাসা,আবার স্বার্থের প্রয়োজনেই ভুলে যাওয়া। ভালোবাসা আর ভুলে যাওয়ার দ্বৈরথে কে কোনটি বেছে নেবে তা কে জানে।নিয়তি বড় অদ্ভূদ!তা না হলে অযোগ্য এই আমিই কেনো হবো তোমার ভালোবাসার ‘মেঘ’। দ্বিধাগ্রস্ত তুমি আরো একবার তোমার দ্বিধার প্রদর্শনী করলে আমাকে তোমার জীবনে জড়িয়ে। আমিও জীবনে আরো একবার কারো গিনিপিগ হওয়ার আনন্দ আর উল্লাস মাতোয়ারা কষ্টে একদিন সারারাত ধরে পান করেছি আমাদের শহরের সবচে প্রিয় কোমল পানীয়টি।এরপর রাত করে মাতাল হয়ে যখন বাড়ী ফিরি ঘরের সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। চিরতরে। আমি বুঝে গিয়েছিলাম অভিমাণী মা আমার বুঝতে পেরে দরজা খোলেনি। আর কোনদিন খোলেনি মা তার দরজা প্রিয় সন্তানের জন্য। সেই আমার শেষ বাড়ী ফেরা। এরপর কোনদিন ভুলে কিংবা প্রয়োজনে কখনই বাড়ী ফেরা হয়নি আর। ঘরের মানুষ আমি পথের মানুষ হলাম। একসময়ের শহরের সবচে প্রিয় মুখটি হলাম সবচে অচেণা মুখ। জীবন যাপন,কথা বলা,চুপ থাকা,গান করা,আবৃত্তি করা সব বদলে গেলো আমার।দৃশ্যপটে সংযোজিত হতে লাগল নতুন নতুন অধ্যায়। শুধু থেকে গেলো প্রিয় কবিতা আমার। রাত জেগে কবিতা লেখার অভ্যাসটা গেলোনা। এতো পরিবর্তনের মাঝেও আমি ঠিকই জেনেছি,কেমন আছো তুমি। জানলাম,শুনলাম প্রথাবিরোধী তুমি অনেক প্রথাই এখন মানো। যেসব শর্ত দিয়ে আমাদের ভালোবাসাকে তুমি করে তুলেছিলে অসম্ভাব্য ,দূরতিক্রম্য,তার বেশির ভাগই এখন ভেসে যায় প্রতিদিন তোমার অশ্র“র নোনাজলে। শর্ত দিয়ে আমার ভালোবাসাকে অপমান করা তুমি এখন অনেক বেশি প্রথাগত।হাঃ হাঃ হাঃ। কষ্ট হচ্ছে দেবী(একদিন এই নামেইতো ডাকতাম) তোমার জন্য। একটা জীবন নষ্ট করে কি পেলে তুমি?
তোমাকে বলা হয়নি- আমার প্রিয় শহর ছেড়ে সেই আমি চলে এলাম আর ফিরে যেতে পারিনি কিংবা যাইনি। যে টগবগে প্রতিবাদী আমাকে চেনে আমার শহর সেই পরিচয়কে আমি প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইনি আমার প্রিয় শহরবাসীর কাছে। মানুষের স্মৃতির কোঠায় আমি বেঁচে থাকতে চাই শুদ্ধ মানুষের পরিচয় নিয়ে। হয়ত বহুবছর পরও কোন এক বিদ্যুৎবিহীন সাঁঝে কোন মা তার সন্তানকে গল্প শোনাবে ‘…এই শহরে একদিন এক দেবদূত ছিলো..যে পাল্টে দিতে চেয়েছে অনেক কিছুই… কিছুটা পেরেছে..কিছুটা না । অনেক সাহস ছিলো তার..বুকভরা ছিলো স্বপ্ন..প্রজাপতি রঙ এতো স্বপ্ন নিয়ে- কী করে যে এতকিছু করতো ভাইয়াটা…আমরা তখন স্কুল ছেড়ে সবে কলেজে উঠেছি..।একদিন কী যেনো হলে তার, শহর ছেড়ে চলে গেলো..আর ফিরে আসেনি।’..স্মৃতির জাবর কাটা শেষ হয়ে আসে না মায়ের…. সন্তানেরা ঘুমিয়ে পড়ে। একদিন ওই আঙ্কেলটার মতো হওয়ার ভাবনায় বিভোর হয়ে ।
তুমি নিজেও জানতে- তোমার এভাবে চলে যাওয়া কী গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে আমার জীবনে। তবু তুমি গেলে তোমার নিজের মতো করে। না,আমি একদম বদলাইনি। অনেক অপচয়,অনেক ক্ষতি আর নিজের অজস্র সম্ভাবণাকে গলা টিপে হত্যা করা এই আমি আজ দূর প্রবাসে নিঃসঙ্গতায়,বেশ আছি। হ্যাঁ, এখনো কষ্ট হয়। মাঝরাতে এখনো কান্না আসে বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো। আসবেই তো…আমি যে আসলেই তোমাকে…এখনো…
অসাধারণ ভালো লাগা একটি কবিতা।
আমি আপনার কবিতাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে পড়ি।